বাইশ বছর পর আবার তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
‘চোখ মেলে’ দেখা বলতে কী
বোঝায়- আমি জানি না। তোমার দিকে তাকিয়ে আমার প্রথম চক্ষু শীতল হয়েছিল সেই বাসর রাতে।
তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে, লাজুক বাঁকা চাহনিতে কী ভীরু ভাব ছিল তোমার। ছিল মৃদু শিহরণ।
পঁচিশ বছর ধরে কল্পনায় আঁকা মুখের সামনে দাঁড়িয়ে আমি বলেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ! তুমি
জানালে, আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি তোমার জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। একটু একটু করে আমাদের কথা
এগুতে লাগল। নীরব রাত্রির গায়ে লেখা হল নতুন কবিতা।
দিন-মাস-বছর গড়িয়ে চলে। আমরা খুঁজে ফিরি নিজেদের
রহস্য। আবিষ্কার করি নতুন নতুন জগত। আমাদের যেসব গ্রাম জনপদ অনাবাদি পড়ে ছিল, সার্বভৌম
সত্ত্বার আইনে তা একীভূত হলো রাষ্ট্রে। ধীরে ধীরে জানতে পারি কার কী পছন্দ, ভালো লাগা।
দুজনের ভিন্ন ভিন্ন অপূর্ণ বৈশিষ্ট্য অঙ্গীভূত হয়ে গড়ে ওঠে এক পরিপূর্ণ অবয়ব।
আমি জানি অধরা, সাতান্ন বছরের দাম্পত্য জীবনে
আমাদের রোমাঞ্চের কমতি ছিল না। পুকুর থেকে শাপলা তুলে তোমার গলায় মালা পরাতাম। তুমি
নারিকেল পাতার কারুকাজ ছিল আমার রঙিন সানগ্লাস। আমাদের কোনোদিন বলতে হয়নি ‘আই লাভ ইউ’। কখনো সংশয়ে টলেনি চিত্ত।
একদিন দূর শহরে এসে উপন্যাস পড়ে জেনেছি কীভাবে
বিয়ের আগে প্রেম করতে হয়। সিনেমা দেখে শিখেছি, লিভ টুগেদার ছাড়া একে অপরকে বোঝা সম্ভব
নয়। কিন্তু আমরা তো এসব কিছুই করি নি। তোমাকে দেখে নিয়েছিলাম বটে, মেশার কথা তো ভাবি
নি। শুধু জেনেছিলাম কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য। আমাদের বিয়ের ভিত্তি ছিল এই যে, স্রষ্টার
নির্দেশমতো দুজনের দৈনিক পাঁচবার প্রেমের প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। মাটিতে
কপাল ঠেকিয়ে স্বীকার করি নিজের সীমাবদ্ধতা।
আজ এতদিন
পরে যখন এসব বিষয়ে ভাবছি, তখন তুমি আমি অনেক দূরে। প্রগতিশীল প্রেমের চর্চা নিয়ে একদিন
তোমার দিকে হাঁটতে গিয়ে এক মহাবিস্ফোরণ ঘটে যায়। মহাজাগতিক বিগব্যাঙে তুমি হারিয়ে গেছো
অন্য গ্রহে। যেখানে আমার পৌঁছাতে প্রয়োজন বিকট শব্দে শিঙ্গায় ফুৎকার। রাখাল ইস্রাফিল
কবে বাঁশি বাজাবে কে জানে! তবুও তোমার সঙ্গে আমার মাঝে মধ্যে দেখা হয়ে যায়। যেটুকু
সময় দেখা হয় না, সেটুকু সময় আমি নিজের মধ্যে থাকি না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন