স্বাগতম!

আমার সাইটে সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমার লেখাগুলো পড়ুন। ভালো লাগা-মন্দ লাগা জানান। সবাইকে শুভেচ্ছা।

প্রেম-ভাবনা


‘মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভালো লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই।’ (সূরা নিসা-৩)
‘মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভালো লাগে’ আয়াতের এই অংশটুকু খুব গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমান ছেলে-মেয়েরা বিয়ের জন্য পছন্দ করতে, ভালোবাসতে পারবে কিনা- তা এই আয়াত থেকে চিন্তা করার বিষয়।

কিছুদিন আগে একটা লেখা পড়েছিলাম, ‘আমি কি ভালোবেসে বিয়ে করতে পারবো?’ ওই লেখায় বলা হয়েছে, পারিবারিক পছন্দে বিয়ে হওয়াই একমাত্র ইসলামসম্মত পন্থা নয়। মুসলিম ছেলেমেয়েদের নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে বিয়ে করার পূর্ণ অধিকার আছে।

সূরা নিসার ওই আয়াতের অনুবাদে মারীফুল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যাদের তোমরা পছন্দ করো’ আর আল কুরআন একাডেমির হাফেজ মুনির আহমেদ অনুবাদ করেছেন, ‘যাদেরকে তোমরা ভালোবাসো’।
তবে ভালো লাগা, পছন্দ করা, ভালোবাসা আর প্রেম এক কথা নয়। প্রেম হচ্ছে সম্পর্ক (রিলেশনশিপ)। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী প্রেম হতে পারে একমাত্র বিয়ের মাধ্যমে।

আমরা নিশ্চয়ই কাউকে হুট করে ‘ভালোবাসি’ বলে প্রেমে জড়াই না। তার সম্পর্কে জেনে বুঝে যখন মনে হয় এই মেয়েটা বা এই ছেলেটার সাথে একটা জীবন পার করে দেওয়া যায়, তখন তাকে বলি, ‘আই লাভ ইউ।’
‘আই লাভ ইউ’ বলার পূর্ব পর্যন্ত চিন্তা-ভাবনা বৈধ (তবে এই জানা-বোঝার জন্য তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে মিশে অভিজ্ঞতা অর্জনের অনুমতি নেই)। প্রেম করতে হলে আগে তাকে চিরদিনের জন্য আপন করে নিতে হবে। ‘তোমরা যখন বিয়ের জন্য এমন ছেলে বা মেয়ে পেয়ে যাবে যার চরিত্র ও জ্ঞান-বুদ্ধিকে তোমরা পছন্দ করবে, তো তখনই তার সাথে বিয়ের সম্বন্ধ স্থাপন করো।’ (তিরমিযী)

এ অধিকার মেয়েদের জন্যও সমান। সাহল ইবন সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার এক মহিলা সম্ভবত তার নাম লায়লা বিনতে কায়স ইবনুল খাতিম রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে হাজির হয়ে তার সাথে নিজেকে বিয়ের জন্য সরাসরি প্রস্তাব পেশ করেন। (বুখারি)

অতএব পছন্দের ব্যক্তিকে ভালোবাসি বলতে হবে বিয়ের দ্বারা। আর সেটা অবশ্যই অভিভাবকদের মাধ্যমে। অভিভাকদের কর্তব্য এতে সাড়া দেওয়া। ‘যদি এমন কেউ তোমার কাছে আসে (বিয়ের পয়গাম নিয়ে)– যার চরিত্র এবং তাকওয়া সন্তোষজনক, তাহলে তার কাছে (তোমার মেয়েকে) বিয়ে দাও। যদি এমনটি না করো, তাহলে পৃথিবীতে মারাত্মকরকম ফেতনা ও বিপর্যয় দেখা দিবে’। (তিরমিযি)

দুঃখজনক হচ্ছে, আমাদের সমাজব্যবস্থায় বিয়েকে অনেক কঠিন করে রাখা হয়েছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানো, চাকরি পাওয়া, প্রতিষ্ঠিত হওয়া কত কিছু। অথচ বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক কত সহজ! এর জন্য কিছুই লাগে না। অথচ এর চেয়ে সহজ হওয়া দরকার বিয়ে। আমার মতে, ছাত্রাবস্থায় বিয়ে হওয়া দরকার। তবে তখনই কেউ কারো দায়িত্ব (আর্থিক) নিবে না। প্রেম করার সময় তো নেয় না। ঠিক সংসার করারও দরকার নেই। অনেকটা প্রেমের মতোই, তবে মানুষটিকে চিরদিনের জন্য নিজের করে নিয়ে, ভবিষ্যতের আশায় বসে থেকে নয়। সেটা অবশ্যই অবিভাবকদের সহযোগিতায়। এ ধরনের সংস্কৃতি চালু হওয়া কি খুব কঠিন?

যাকে আমি ভালোবাসছি, একসাথে ঘুরছি, বাসা থেকে খাবার রান্না করে এনে পরম মমতায় খাওয়াচ্ছি, কষ্টের টাকা বাঁচিয়ে উপহার কিনে দিচ্ছি, মন খারাপের বিকেলে যার ভালোবাসায় আমার জীবন সুখের হয়ে উঠছে, হৃদয়ের মতো পবিত্রতম জায়গা যার জন্য বরাদ্দ করেছি, তখনও আমি নিশ্চিত নই- এই মানুষটার সাথে আজীবন থাকা হবে কিনা। প্রতিষ্ঠিত হওয়া-না হওয়া, নির্ধারিত সময়ের অপেক্ষা আর পারিবারিক পছন্দের ফাঁদে আটকে যায় আমাদের ভালোবাসার অনুভূতি। এর চেয়ে অমানবিক আর কী হতে পারে! চোখের সামনে কত হৃদয় ভেঙে যেতে দেখলাম!

তরুণ বয়সে আমরা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হবো এটাই স্বাভাবিক। ভালো লাগবে, ভালো বাসবো এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। ‘আর তাঁর অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে, তিনি তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের জন্য যুগল সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের মধ্যে স্বস্তি পেতে পারো। আর তিনি তোমাদের মধ্যে প্রেম ও মায়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা রুম-২১)

কিন্তু ইসলামের নির্দেশনা না মেনে পারিবারিক-সামাজিক মূর্খতার আনুগত্য করে স্বতঃস্ফুর্ত আবেগ অনুভূতির প্রকাশে চোরাপথে প্রেমের দ্বারস্থ হই। তারপর হয়তো একদিন প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে গতানুগতিক বিয়ে করতে হয়। অথচ অনুভবে মিশে থাকে অন্য কেউ। বিষণ্ণ সন্ধ্যায় পুরনো প্রেমের স্মৃতি মনে করে জীবনটা ছন্দহীন নীরস লাগে।
বিয়ে সহজ হোক। বিয়ের আগে প্রেম নয়, বিয়ের পরে পরকীয়া নয়।

1 টি মন্তব্য:

  1. আগেকার দিনে মানুষের যৌবন আসতো দেরিতে, আর বিয়ে করতো আগে। কিন্তু বর্তমানে জীবনযাপনের ধরণ ও পরিবেশগত কারণে যৌবন আগে আসে; দু:খের বিষয় হল এখন বিয়ে বাধ্য হয়েই দেরিতে করতে হয়, কেনিনা এখন বিয়ে কঠিন, আর প্রেম সহজ।

    উত্তরমুছুন